নৈতিক গুণাবলি বিষয়ক তিনটি হাদিস (পাঠ ১৪)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা - কুরআন ও হাদিস শিক্ষা | NCTB BOOK
242

মানবপ্রেম ও পরমতসহিষ্ণুতা দুটি মহৎ গুণ। আমাদের সমাজে নানারকম লোকজন বসবাস করে। ধনী-গরিব, সাদা-কালো, সুস্থ-অসুস্থ, হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবরকমের লোকদের নিয়েই আমাদের সমাজ। সবাই এ সমাজের সদস্য। সবার মিলিত প্রচেষ্টায় সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। সবার মধ্যে ঐক্য ও সহযোগিতা না থাকলে কোনো সমাজ উন্নতি লাভ করতে পারে না। আর এর জন্য প্রয়োজন মানুষের প্রতি প্রীতি, দয়া-মায়া, ভালোবাসা। ইসলাম ধর্মে এগুলোর প্রতি খুবই গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আমাদের মহানবি (স.) নিজে সকল মানুষকে ভালোবাসতেন। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার করতেন। আত্মীয়-অনাত্মীয়, পরিচিত-অপরিচিত সবাইকেই তিনি ভালোবাসতেন, সবার প্রতি দয়া করতেন। আমাদের তিনি এরূপ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিস শরিফে আমরা তাঁর এসব নির্দেশ দেখতে পাই।

আমাদের সমাজে মুসলমানগণের পাশাপাশি অমুসলিমগণও বসবাস করে। তারাও আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি। তাঁদের প্রতিও সদাচরণ করতে হবে। তাঁদের ধর্ম ও বিশ্বাসের প্রতি কোনোরূপ ঠাট্টা-তামাশা করা যাবে না। তাঁদেরকে স্বাধীনভাবে নিজ ধর্ম পালন করতে দিতে হবে। এটাই হলো মহানবি (স.) ও দীন ইসলামের শিক্ষা। হাদিস শরিফে এ সম্পর্কেও আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ পাঠে আমরা মানবপ্রেম ও পরমতসহিষ্ণুতা-সংক্রান্ত তিনটি হাদিস জানব।

হাদিস ১

لا يَرْحَمُ اللَّهُ مَنْ لَّا يَرْحَمُ النَّاسَ

অর্থ: 'যে মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে না, আল্লাহ তায়ালাও তার প্রতি দয়া করেন না।' (সহিহ বুখারি ও সহিহ্ মুসলিম)

শিক্ষা

পৃথিবীর সকল মানুষ মহান আল্লাহর সৃষ্টি। সকলের প্রতিই সদাচার করতে হবে। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের প্রতি দয়া-মায়া, ভালোবাসা দেখাতে হবে। এমন যেন না হয় যে আমরা শুধু ধনীদের ভালোবাসব, গরিবদের ভালোবাসব না। তদ্রূপ অমুসলিমদেরকে বাদ দিয়ে শুধু মুসলিমদের সাহায্য-সহযোগিতা করাও ঠিক নয়। বরং প্রয়োজন অনুসারে সকলের প্রতিই দয়া, ভালোবাসা ও সহযোগিতা করতে হবে। তাহলে আল্লাহ তায়ালা খুশি হবেন এবং আমাদের প্রতি দয়া করবেন। সকল মানুষকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা করাই এ হাদিসের শিক্ষা।

হাদিস ২

لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعُ رِحْم -

অর্থ: 'আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।' (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

শিক্ষা

আত্মীয়স্বজনের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে। মা-বাবা, ভাই-বোন, খালা-খালু, ফুফু-ফুফা, দাদা-দাদি, নানা-নানি সকলেই আমাদের আত্মীয়। তারা আমাদের একান্ত আপনজন। এছাড়া আমাদের আরও বহু আত্মীয়স্বজন রয়েছেন। সকলের সাথেই আমরা সম্পর্ক রক্ষা করে চলব। কারো সাথেই সম্পর্ক ছিন্ন করব না।

আত্মীয়-পরিজন যদি অমুসলিমও হন তাঁদের সাথেও সম্পর্ক ত্যাগ করা যাবে না। বরং তাঁদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। সদাচার করতে হবে। প্রয়োজনে সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে। বিপদে-আপদে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমরা সকল আত্মীয়ের সাথে সুন্দর সম্পর্ক রাখব। তবেই আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব।

হাদিস ৩

الَّا مَنْ ظَلَمَ مُعَاهِدًا أَوِ انْتَقَصَهُ أَوْ كَلَّفَهُ فَوْقَ طَاقَتِهِ أَوْ أَخَذَ مِنْهُ شَيْئًا بِغَيْرِ طِيبِ نَفْسٍ فَأَنَا حَجِيجُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ -

অর্থ: 'সাবধান! কেউ যদি কোনো যিম্মির প্রতি যুলুম করে অথবা তাকে তার অধিকার থেকে কম দেয় কিংবা ক্ষমতাবহির্ভূত কোনো কাজ তার উপর চাপিয়ে দেয় বা জোরপূর্বক তার থেকে কোনো মালামাল নিয়ে যায়, তাহলে কিয়ামতের দিন আমি তার (যিম্মির) পক্ষ অবলম্বন করব।' (আবু দাউদ)

শিক্ষা

মুসলিম-অমুসলিম সকলেই এ দেশের নাগরিক। মুসলিম-অমুসলিমগণের প্রতি কোনোরূপ অন্যায়-অত্যাচার করা যাবে না।

তাদের ধর্ম, জীবন, ধন-সম্পদ, সম্ভ্রম ইত্যাদির ক্ষতি করা যাবে না। শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মপালনে তাদের কোনোরূপ বাধা দেওয়া যাবে না। তাদের ধর্ম নিয়ে কোনোরূপ অবহেলা প্রদর্শন করা যাবে না। তাদের সাথে উত্তম আচরণ করতে হবে। তাদের প্রতি সহিষ্ণুতা ও সহমর্মিতা প্রদর্শন করতে হবে। কেননা তাদের প্রতি অত্যাচার করলে, কষ্ট দিলে স্বয়ং নবি করিম (স.) কিয়ামতের দিন আমাদের পক্ষে সুপারিশ করবেন না। আর মহানবি (স.) কারো পক্ষে সুপারিশ না করলে তার ধ্বংস অনিবার্য। সুতরাং আমরা সকল মানুষকে ভালোবাসব। কাউকে কষ্ট দেবো না, কারো প্রতি অত্যাচার-নির্যাতন করব না। সমাজের সকলকে ধর্ম পরিচয়ে নয়, মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে সকলের সাথে সম্ভাব বজায় রাখব।

বাড়ির কাজ: শিক্ষার্থী এ পাঠে উদ্ধৃত হাদিস তিনটি অর্থসহ মুখস্থ বলবে।
Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।